বুধবার, ২১ এপ্রিল, ২০২১

ভোজ্য তেলের ইতিহাস কি বলে !


বাংলাদেশ ১৯৬০ সাল পর্যন্ত ভোজ্য তেল ও চর্বিতে স্বয়ংসম্পূর্ন ছিল। তখন সরিষার তেল বাংলাদেশে প্রধান ভোজ্য তেল হিসেবে ব্যবহৃত হত, যা দেশের চাহিদা মেটানোর জন্য পর্যাপ্ত পরিমানে উৎপাদিত হত। এখানে উল্লেখ্য যে, সরিষার তেল বাংলাদেশে প্রাচীন কাল হতে ভোজ্য তেল হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

এছাড়াও বাদাম তেল ও তিল তেল উৎপাদিত হত দেশের ভোজ্য তেলের চাহিদার বিকল্প হিসেবে। কিন্তু অপর্যাপ্ত উৎপাদন ও উচ্চমূল্য সামস্টিক জনগণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে থাকার কারণে এর ব্যবহার বাজারে প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হয় এবং ক্রমান্বয়ে ভোজ্য তেল হিসেবে বাদাম ও তিল তেলের ব্যবহার বন্ধ হয়ে যায়।
যদিও বর্তমানে এই দুই প্রকার তৈল বীজ স্ন্যাক জাতীয় খাবার তৈরীতে ব্যবহার হচ্ছে। দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং মাথাপিছু ভোজ্য তেলের ব্যবহার বৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে দেশীয় ভোজ্য তেলের উৎপাদন ততটা বৃদ্ধি পায়নি।
পরিনামে ১৯৬০ সালের পর হতে দেশে সয়াবীন তেলের আমদানী শুরু হয় যা প্রথমদিকে যুক্তরাষ্ট্রের চখ-৪৮০ চুক্তির আওতায় আসত। স্থানীয় ভোক্তাগণ সয়াবীন তেল কে সহজভাবে গ্রহণ করেনি বরং একে সরিষার তেল অপেক্ষা নিম্ন মানের মনে করত। তাই সয়াবীন তেল প্রধানত সরকারী রেশনিং এর মাধ্যমে বিক্রী হত এবং নিম্ন আয়ের জনগণই বেশী ব্যবহার করত।
পরবর্তীতে দেশে উৎপাদিত সরিষার তেলের অপর্যাপ্ত উৎপাদন এবং মূল্য বৃদ্ধির কারণে ভোক্তাগন সয়াবীন তেলের দিকে ঝুঁকে পড়ে যা তুলনামূলকভাবে সস্তায় এবং চাহিদার বিপরীতে সহজেই পাওয়া যেত আর এভাবেই সয়াবীন তেলের দখলে চলে যায় দেশীয় ভোজ্য তেলের বাজার।
পাম তেলের প্রবেশ ঘটে বাংলাদেশ স্বাধীনতা পরবর্তী দেশীয় চাহিদার বিপরীতে। তবে ১৯৯০ সালের আগ পর্যন্ত এদেশে
অপরিশোধিত পাম তেল কে পরিশোধন করার ব্যবস্থা ছিল না বিধায় শুধু পরিশোধিত পাম অলিনই আমদানী হত যা দেশীয় বাজারে পাম তেল নামে পরিচিত ছিল। তখন পরিশোধিত অলিন প্রধানত সিংগাপুর হতে আমদানী হত এবং সরাসরি বাজারে বিক্রী হত।
অন্য দিকে, আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা সমূহ কর্তৃক সাহায্য হিসাবে আমদানীকৃত পরিশোধিত পাম অলিন সরকার
কর্তৃক রেশনিং এর মাধ্যমে বিতরণ করা হত। উন্নত গুনগত মান এবং বাজার মূল্যের দিক দিয়ে অন্যান্য ভোজ্য তেলের তুলনায় সস্তা হওয়ায় পাম তেল দ্রুত ভোক্তাগণের আস্থা পেতে সক্ষম হয়।
কিন্তু ১৯৮০ সালের মাঝামাঝিতে পাম তেলের বিরূদ্ধে
বিতর্ক এবং ক্রমবর্ধমান বাজার পরিস্থিতির ভিত্তিতে সাধারণ জনগণের মধ্যে পাম তেলের গুরুত্ব কমে যায় এবং আস্তে আস্তে আমদানী চাহিদাও কমে যায়।
পরবর্তীতে, ১৯৯০ সালের দিকে দেশীয় ভোজ্য তেল পরিশোধন প্রতিষ্ঠানগুলো উন্নতমানের পরিশোধন প্রযুক্তি ও আধুনিক
সুযোগ সুবিধা সংবলিত প্লান্ট স্থাপন করায় অপরিশোধিত পাম তেল আমদানী শুরু হয় এবং স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত
পরিশোধিত পাম তেলের সাশ্রয়ী মূল্য ও উন্নত গুনগত মানের কারণে স্থানীয় ভোক্তাদের নিকট হতে ভাল সাড়া পায়। ১৯৯৮
সালের পর আরো উন্নত মানের ডাবল ফ্রেকশনেটেড পাম তেল যা স্থানীয়ভাবে সুপার পাম নামে বিক্রি হয়, পরিচিতি ঘটার পর
পাম তেলের চাহিদা দ্রুত বাড়তে থাকে যা স্থানীয় বাজারে সুপার পাম নামে পরিচিত। বর্তমানে পাম তেলই দেশের অন্যতম প্রধান ভোজ্য তেল।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

ভোজ্য তেলের ইতিহাস কি বলে !

বাংলাদেশ ১৯৬০ সাল পর্যন্ত ভোজ্য তেল ও চর্বিতে স্বয়ংসম্পূর্ন ছিল। তখন সরিষার তেল বাংলাদেশে প্রধান ভোজ্য তেল হিসেবে ব্যবহৃত হত, যা...