রবিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২১

স্বাস্থ্য উপকারিতায় কালো জিরার তেল




 কালো জিরার তেলে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট ও এন্টি- ইনফালাম্যাটরি কমপ্লেক্স যা শরীরে বিভিন্ন রকম রোগের বংশবৃদ্ধিতে বাধা দেয়। যেমনঃ

১)ক্যান্সার প্রতিরোধে
সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে কালো জিরা তেলের নিয়মিত ব্যবহার ব্রেইন ক্যান্সার ও ব্রেস্ট ক্যান্সার সেল জন্মাতে বাধা দেয়। কালো জিরার তেলে থাকা থাইকিউমিন প্রোগ্রাম মূলত ক্যান্সার প্রতিরোধে কাজ করে থাকে।
২) লিভার ও কিডনি কার্যক্রম ঠিক রাখতে
২০১৩ সালের এক গবেষণায় উঠে এসেছে যে, কালো জিরার তেল কিডনি ও লিভারের কার্যক্রম ঠিক,রাখতে সাহায্য করে। তবে অবশ্যই সেক্ষেত্রে আপনাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
৩) ডায়বেটিস প্রতিরোধে
এন্ডোক্রিনলজি এন্ড মেটাবলিজম জার্নালের এক রিপোর্টে প্রকাশ করা হয়, কালো জিরায় থাকা এন্টিডায়বেটিক প্রোপ্রার্টিজ রয়েছে। যা রক্তে সুগার লেবেল নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
৪) স্মরণশক্তি বৃদ্ধিতে কালো – জিরার তেল
কালো জিরা তেল মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে থাকে। ফলে মস্তিষ্কের কার্যক্রমতা বৃদ্ধি পায়। নিয়মিত এক চামচ করে কালো জিরার তেল খেলে সুফল পাওয়া যায়।
৫) মাথা ব্যাথা সারাতে
কালো- জিরার তেল বেশ উপকারী মাথা ব্যাথা সারাতে। কপালের দুই পাশে মালিশ করলে বেশ আরাম পাওয়া যায়।
৬) বাতের ব্যাথায় কালো- জিরার তেল
বাতের ব্যাথা কালো-জিরার তেলের নিয়মিত মালিশ বেশ উপকারি। এতে থাকা এন্টি- ইনফালাম্যাটরি ত্বকের সেল,গুলোর,মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করে বাতের ব্যাথায় আরাম দেয়।
৭) পুরাতন টিউমার সারাতে
এই রোগ সারাতে বেশ প্রাচীন কাল থেকে ব্যবহৃত হয়ে,আসছে। কালো-জিরার তেলে থাকা এন্টি-অক্সিডেন্ট পুরাতন টিউমারের সেল গুলোকে ধ্বংস করতে সাহায্য করে।
৮) হাঁপানি দূর করতে
হাঁপানি দূর করতে,কালো-জিরার তেল অনেক আগে থেকে ব্যবহৃত হচ্ছে। এখানে কালো- জিরার তেলের নিয়মিত মালিশ বা খেয়ে বেশ উপকার পাওয়া যায়।
৯) ফোঁড়া সারাতে
প্রায় কম – বেশি আমরা সবাই ফোঁড়া ব্যাথাদায়ক যন্ত্রণা পার করি। এই ফোঁড়া সারাতে কালো-জিরার তেল অতুলনীয়। ফোঁড়া পেকে গেলে তার, মাথায় কালো- জিরার তেল দিয়ে রাখলে কয়েক দিনে ব্যাথা কম ও ফোঁড়া সেরে যাবে।
১০) ওজন কমাতে
কালো-জিরার তেল শরীরের বাড়তি ওজন কমাতে সাহায্য করে। ডায়াবেটিস ও মেটাবলিজম জার্নালের এক প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়,কালো-জিরার তেল বডি ম্যাস ইনডেক্স (BMI) ভালো রাখতে সাহায্য করে। এতে শরীরের বাড়তি মেদ ঝড়ে যায়।
১১) হার্ট ভালো রাখে
কালো- জিরার তেলে থাকা এন্টি-অক্সিডেন্ট হার্টে রক্ত চলাচলের মাএা স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। ফলে হার্টের ওপর চাপ পড়ে কম। সহজে হার্ট সুস্থ থাকে।
১২) গ্যাসট্রিকের সমস্যায়
প্রায়শ আমরা সবাই সমস্যাটির পড়ে থাকি। সেক্ষেত্রে প্রতিদিন গরম দুধের সাথে এক চামচ কালো-জিরার তেল মিশিয়ে খেলে পেটে গ্যাসের সমস্যা দূর হবে ৷
১৩) উচ্চ রক্ত-চাপ নিয়ন্ত্রণে
এই সমস্যাটি প্রায় সকল বয়সের এখন নিত্য সঙ্গী। এখানে কালো- জিরার মতো কালো- জিরার তেলে আপনি খাদ্য তালিকা যোগ করতে পারেন। এতে সহজেই উচ্চ রক্তচাপ আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
১৪) পুরুষত্ব হীনতা দূর করতে
বর্তমান সময়ে প্রায় এই সমস্যাটির কথা,শোনা,যায়। কালো-জিরার তেল নিয়মিত সেবনে পুরুষের শুক্রানু সমস্যা সমাধান হয়। নারী- পুরুষের যৌন শক্তি বৃদ্ধিতে কালো-জিরার তেল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১৫) ঠান্ডাজনিত রোগ সারাতে
আপনার ঠান্ডাজনিত রোগ সর্দি-কাশিতে গরম রং চায়ে, কাপে কয়েক ফোটা কালো-জিরার তেল মিশিয়ে পান করলে বেশ আরাম পাওয়া যায়।


১৬) দাঁতের সুরক্ষায় এবং জীবাণু প্রতিরোধে
নারিকেল তেলের সাথে কয়েক ফোটা কালো-জিরার তেল মিশিয়ে কুলকুচি করলে দাঁতের গোড়া,শক্ত হয় এবং মুখের জীবনু প্রতিরোধ করে। সাথে সাথে মুখের দূর্গন্ধ দূর করে। আপনার দাঁতের হলুদ দূর করে কালো-জিরার তেল।
কালো-জিরার তেলকে আপনি মাউথওয়াশ হিসেবে ব্যবহার করতে,পারেন। সেক্ষেত্রে এক চা-চামচের ১/৪ অংশ কালো- জিরার তেল,তিলের তেল এক চা-চামচ ও কয়েক ফোটা লবঙ্গ তেল মিশিয়ে মাউথওয়াশ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এতে দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হবে।
রুপচর্চায় কালো-জিরার তেল
স্বাস্থ্যের,পাশাপাশি রুপচর্চায়ও,কালো- জিরার তেল বেশ উপকারী। যেমনঃ
ত্বকের যত্নে
ত্বকের যত্নে কালো-জিরার তেল অনেক কার্যকরী।
ব্রনের সমস্যায়
ব্রনের সমস্যায় দিনদিন যেন বেড়েই চলে যেন ব্যস্ত জীবনে। কালো-জিরার তেলে থাকা এন্টি-মাইক্রোবিয়াল, এন্টি-ইনফালাম্যাটরি ত্বকের ব্রনের জীবনু গুলো ধ্বংস করে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, কালো-জিরার তেল ৫৮% জীবানু ধ্বংস করে প্রথম সপ্তাহে এবং দ্বিতীয় সপ্তাহে ৩৮% জীবাণু হ্রাস পায় দ্বিতীয় সপ্তাহে।
একজিমা দূর করতে
ত্বকের একপ্রকার বিশ্রী সমস্যা হচ্ছে একজিমা। কালো- জিরার তেলের এন্টি-বায়টেরিয়াল কমপ্লেক্স ত্বকের অভ্যন্তরীণ থেকে একজিমার সেল গুলো কে ধ্বংস করে এবং রোগটি সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে।
সোরিয়াসিস
এটিও এক প্রকার ত্বকের সমস্যা। এখানে ত্বকের চুলকানি সহ দাগ পড়ে যায়।এখানেও কালো-জিরার তেল এই রোগটি নির্মূলে সাহায্য করে।
শ্বেত রোগ দূর করতে
শ্বেত বা ছুলী রোগটা সারাতে কালো-জিরার তেল বেশ উপকারী। আগে একটুকরো আপেল ছুলীর স্থানে কিছু ক্ষণ ঘষে নিতে হবে। তারপর সেই স্থানটিতে কালো- জিরার তেল লাগাতে হবে। এভাবে একমাসে অনেকটা ছুলী রোগের সমাধান হয়ে যাবে।
ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করতে
কালো-জিরার তেলে থাকা ফ্যাটি এসিড ও অ্যামানো এসিড ত্বকের ভিতরের লিপিড লেয়ারকে ময়েশ্চারাইজ করে। এতে থাকা এন্টি-অক্সিডেন্ট ত্বকের সেল গুলোকে উজ্জ্বল করে।
ত্বকের বলিরেখা দূর করে
বর্তমান সময়ে বয়সের আগে মুটিয়ে যাওয়া আমাদের ত্বক। কালো-জিরার তেলে থাকা এন্টি-অক্সিডেন্ট ত্বকের বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে। এতো আরও রয়েছে এন্টি- ফালাম্যাটরি যা ত্বকের স্ট্রেস গুলো দূর করে।
চোখের পাপড়ির ঘনত্ব বাড়াতে
অনেকেই চান ঘন কালো চোখের পাপড়ি। এখানে কালো-জিরার তেল আপনাকে সাহায্য করতে পারে। কয়েক ফোটা কালো-জিরার তেল নিয়ে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে চোখের পাপড়িতে ব্যবহার করুন।সকালে মুখ পরিষ্কার করে ফেলুন। তবে অবশ্যই এখানে সাবধা, থাকতে হবে যেন চোখের মাঝে যেন চলে না যায় তেলটি।
চুলের যত্নে কালো-জিরার তেল
চুলের যত্নে কালো-জিরার তেল অসামান্য ভূমিকা পালন করে।
চুল পড়া কমাতে
এখনকার সাধারণ চুলের সমস্যা এটি। নারিকেল তেলের সাথে মিশিয়ে কালো-জিরার তেল ব্যবহার করলে চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়। পরিমাণমতো নারিকেল তেল নিয়ে তার সাথে এক- চামচ কালো-জিরার তেল মিশিয়ে ব্যবহার,করতে হবে। এই তেলটি সপ্তাহে দুই দিন ব্যবহার করলে ভাল ফল পাওয়া যায়। এখানে তেলটি চুলের গোড়ায় ম্যাসেজ করে দিতে হবে।
চুল অকালে পেকে যাওয়া রোধ করতে
অনেকটা অস্বাস্থ্যকর জীবন যাপন ও বিভিন্ন রকম দুশ্চিন্তা আমাদের,অকালে,চুল পেকে যাচ্ছে। সেক্ষেত্রে কালো- জিরার,তেল হালকা,গরম করে চুলের গোড়ায় ম্যাসেজ করলে, চুলের গোড়ায় রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায়। ফলে সহজে চুলের এই অকাল পেকে যাওয়া রোধ করা সম্ভব হয়।
চুলকে লম্বা করতে
কালো-জিরার তেলে থাকা অ্যামানো এসিড চুলকে লম্বা করতে,সাহায্য করে সাথে চুলের কার্বন ফিরাতে সাহায্য করে। এতে সহজেই চুল কালো ও ঘন হয়।
চুলকে করে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল
সাধারণত চুলের ফলিক এসিড হ্রাস পেলে চুল পাতলা ও রুক্ষ হয়ে যায়। এই সমস্যা সমাধানে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আধা চা-চামচ কালোজিরার তেল মাথার তালুতে পলও চুলের গোড়ায় ম্যাসেজ করতে হবে। প্রতিদিন ব্যবহারে চুলের হারোনো স্বাস্থ্য ফিরে,পেতে সাহায্য করবে।
তবে এতো উপকার আপনি তখনই পাবেন, যখন আপনার জন্য সঠিক মানের তেল পাবেন। আলাল তেল কল(Alal Oil Mill) ফেসবুক পেজ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

ভোজ্য তেলের ইতিহাস কি বলে !

বাংলাদেশ ১৯৬০ সাল পর্যন্ত ভোজ্য তেল ও চর্বিতে স্বয়ংসম্পূর্ন ছিল। তখন সরিষার তেল বাংলাদেশে প্রধান ভোজ্য তেল হিসেবে ব্যবহৃত হত, যা...